চকরিয়া প্রতিনিধি, কক্সবাজার:
দেশের শত শত শিক্ষিত বেকার ছেলেদের চাকরির নাম দিয়ে তাদের সাথে প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে ইউরো ফার্মা নামক একটি ঔষধ কোম্পানির মালিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ঔষধ কোম্পানির মালিক ও কর্মকর্তাগন যোগসাজশে দেশের শিক্ষিত বেকার ছেলেদের টার্গেট করে সহজ শর্তে চাকুরীর প্রলোভন দেয়। চাকুরী দেওয়ার সময় কৌশলে দুইটি খালি চেক ( তারিখ ও টাকার পরিমান বিহীন স্বাক্ষর যুক্ত) নেয়। চাকুরী প্রত্যাশী ছেলেরা চাকুরীর প্রয়োজনে, কোম্পানির অনৈতিক এই কুটকৌশলের ফাঁদ বুঝতে না পেরে তাদের কথা মতো চেক জমা দিয়ে চাকরি নেয়। পরবর্তীতে ঐ কোম্পানির ঔষুধ বাজার জাত করতে গিয়ে এসব ছেলেরা পড়ে যায় ব্যাপক সমস্যায়। গুনগতমানহীন এ সব ঔষুধ ডাক্তারেরা লিখতে অনিহা প্রকাশ করে এবং ফার্মেসী গুলোও রাখতে চায়না। কোম্পানিতে চাকুরী নেওয়া এসব ছেলেদেরকে প্রতি মাসে দের/ দুই লক্ষ টাকা বিক্রয়ের টার্গেট দিয়ে বেতন ভাতা নির্ধারণ করে দেয় কোম্পানির উর্ধতন কর্মকর্তারা। এসব চাকুরী নেওয়া ছেলেরা বাধ্য হয়ে বেতন ভাতা পাওয়ার জন্য ফার্মেসীতে কোম্পানির দেওয়া ৩০% – ৫০% ডিসকাউন্টের বাইরে আরো অতিরিক্ত ১০%-২০% ডিসকাউন্ট দিয়ে নিম্নমানের এসব ঔষধ বিক্রি করে চাকরি বাঁচাতে চেষ্টা করতে থাকে। এভাবে কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর দেখা যায় কোম্পানির ডিসকাউন্টের বাইরে অতিরিক্ত ডিসকাউন্টে বিক্রি করা টাকার পরিমাণ ও ফার্মেসী গুলিতে বকেয়া থাকা টাকার পরিমাণ মিলে বড় অংকের একটা পাওনা টাকার বোঝা চলে আসে এসব চাকুরীজীবি ছেলেদের উপর। এদিকে কোম্পানি একটি নীতিমালা তৈরি করে ছেলেদের হাতে ধরিয়ে দেয়। ঐ অনৈতিক নীতিমালার আলোকে এসব চাকুরীজীবি ছেলেরা বকেয়া টাকা পরিশোধ করে, আবার বিক্রয় করতে না পেরে দুই তিন মাস বেতন ভাতা হীন ভাবে মার্কেটে ঘুরে ঘুরে, বাধ্য হয় চাকরি ছাড়তে। যখনি চাকরি চেড়েদিতে চায়, তখনই কোম্পানির মালিক ও অসাধু কর্মকর্তাদের আসল রূপ ও উদ্দেশ্য প্রকাশ পায়। এমনই পরিস্থিতির শিকার একজন সাবেক এরিয়া ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমি এই কোম্পানীতে চাকুরী নেওয়ার সময় আমার কাছ থেকেও ২টি খালি চেক চায় ঐ কোম্পানিতে কর্মরত কক্সবাজার জেলার রিজিওনাল ম্যানেজার হুমায়ুন কবির। ওনি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন। আমার পুর্বের কোম্পানিতে চাকুরীরত অবস্থায় ওনি প্রায় আমার অফিসে আসতেন। তখন ওনি এবং আমি একেই পোষ্টে (এরিয়া ম্যানেজার) চাকরি করার কারনে আমার লেনদেন সম্পর্কে ভালই জানতেন। আমি ওনাকে চেক কেন দিতে হবে জানতে চাইলে বলেন, এটি কোম্পানির নিয়ম, চেক দিতে আপনার সমস্যা কি? আপনিতো এখানে টাকা মেরে দিতে পারেন না বা দেওয়ার সুযোগও নেই। কারণ আপনিতো ম্যানেজার আপনার নামেতো কোন ঔষধ অফিস থেকে বের হবে না। ওনি আরও বলেন আমি আছিনা, আপনার এত চিন্তা কিসের? আপনি যখন চাকরি চেড়ে দিবেন, তখন আমি আমার নিজ দায়িত্বে আপনার চেক গুলো ফেরত দিয়ে দিব। আমি ওনার কথায় বিশ্বাস করে দুটি চেক ওনার হাতে দিয়ে ইউরো ফার্মায় সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পদে যোগদান করি। যোগদান করার পরেই আমি বুঝতে পারি তাদের কথা ও কাজের কোন মিল নেই। আমাকে যে সকল সুযোগ সুবিধা (বেতন, ভাতা ও অন্যান্য বোনাস) দেওয়ার কথা ছিল, তা দিচ্ছে না। আমি আমার উর্ধতন অফিসার হুমায়ুন কবির সাহেব কে বল্লে, ওনি ওনার উর্ধতন অফিসার এসিস্টেন্ট সেলস ম্যানেজার আনোয়ার আব্দুল্লাহ সাহেবকে দেখিয়ে দেন। ওনার সাথে যোগাযোগ করলে, ওনি এই মাসে নয়তো পরের মাসে হবে, এই রকম করে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এই অবস্থায় আমি চাকুরী করবোনা মর্মে ইউরো ফার্মার ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ড. বোরহান উদ্দিন খান বরাবর চাকুরী হতে অব্যাহতীর আবেদন করি। ড. বোরহান উদ্দিন খান সাহেব আমার অব্যাহতী পত্র পেয়ে ওনার ব্যাক্তিগত ফোন থেকে আমাকে ফোন দেয় এবং তিন হাজার টাকা বেতন বাড়িয়ে দিয়ে চাকরি না ছাড়তে অনুরোধ করেন। ওনার কথায় আমি চাকুরী করতে থাকি। কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর, একজন ডাক্তার ইউরো ফার্মার তৈরিকৃত ইনজেকশন রুগীর শরীরে পুস করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন, ইনজেকশনে শেওলা! তখন ঐটি বাদ দিয়ে অন্য ফার্মেসী থেকে আরেকটি ইনজেকশন এনে দেখেন একই রকম। তখন সাথে সাথে আমাকে বিষয়টি জানালে, আমি ঐ এলাকার প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে ঔষধ গুলি দেখতে বলি। আমার কোম্পানির প্রতিনিধি বিষয়টি আমাকে নিশ্চিত করিলে, আমি ঐ ইনজেকশনের (শেওলা যুক্ত) ছবি তুলে হেড অফিসে পাঠিয়ে দিই। অনেক দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও কোম্পানির পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছিল না। এদিকে ফার্মেসী মালিকগণ ভেজাল ঔষুধ বাজারে দিয়েছেন কেন? বলে হুমকি দিয়ে কোম্পানির থেকে ঔষধ নেয়ার বিল দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এবিষয়ে উর্ধতন কর্মকর্তা এসিস্টেন্ট সেলস ম্যানেজার আনোয়ার আব্দুল্লাহর সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। তার দুই দিন পরেই কোম্পানির পক্ষ থেকে আমাকে অব্যহতি দেয় মর্মে একটা চিঠি দেয়। চিঠি পাওয়ার পরে ড.বোরহান সাহেবের সাথে যোগাযোগ করলে ওনি আমার সাথে কথা না বলে ফোন রেখেদেয়। পরে সিনিয়র অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করে আমার পাওনা দুই মাসের বেতন ও ৩ মাসের ভাতা বাবদ মোট ৮৬,০০০ (ছিয়াশি হাজার) টাকা চাইলে, উল্টো আমার কাছ থেকে টাকা পাবে বলে দাবি করে এবং চাকুরী নেওয়ার সময় আমার কাছ থেকে নেওয়া চেকে মোটা অংকের টাকা বসিয়ে মামলা করবে বলে হুমকি দেয়। এই রকম ভয়ংকর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউরো ফার্মায় বর্তমানে চাকুরীরত ও পুর্বে চাকুরী করতো এমন ৪/৫ জনের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়। ইউরো ফার্মার মালিক ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.বোরহান উদ্দিন খান ও কোম্পানির কর্মকর্তা আনোয়ার আব্দুল্লাহ এবং হুমায়ুন কবির সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা