চকরিয়া অফিস:
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) নিউরো সার্জারি বিভাগের একটি সিটে দুই মাস বয়সী শিশু উম্মে হাবিবার মাথার পাশে বসে মা লালু ঝর্ণা অঝুর ধারায় কাঁদছে। মাঝে মাঝে গাঁয়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে দোয়া পড়ছে। গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তার হুঁশ নেই। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পুরিত্যাখালী এলাকায় চেয়ারম্যান দিদার বাহিনীর হামলায় ইটের আঘাতে শিশুটিও গুরুতর আহত হয়েছে। তার মাথা ফেটে গেছে।
শিশুটির মা লালু ঝর্ণা জানান, পুরুত্যাখালী এলাকায় শাহনা বেগম নামের এক নারী বসতঘর নির্মাণ করতে গেলে কোনাখালী এলাকার একদল সন্ত্রাসী চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় এলাকার লোকজন চাঁদাবাজদের প্রতিহত করে। রাত ১১টার দিকে ওই সন্ত্রাসীরা স্থানীয় কোনখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দিদারের নেতৃত্বে শতাধিক অস্ত্রধারী লোক এসে ওই এলাকার বেশকিছু বাড়ি-ঘরে হামলা করে। এসময় তাঁর দুই মাস বয়সের শিশু উম্মে হাবিবার মাথায় পাথরের আঘাত লাগে। সাথে সাথে শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিশুটিকে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে।
এ ঘটনায় আহত শিশুটির পিতা মোহাম্মদ রুবেল জানান, তারা ঘরে ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ করে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল আসতে থাকে তার ঘরের দিকে। এসে রুবেল ও তার শিশুটি মারাত্মকভাবে আহত হয়। এরপর থেকেই সে চোখ খুলছে না। সারা শব্দ নেই।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ হামিদ হাসান জানান, শিশুটির মাথায় আঘাত লেগেছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। ২৪ ঘন্টা না গেলে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
ইটের আঘাতে আহত লায়েক উদ্দিন নামের পুরিত্যাখালী ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি জানান, কোনাখালীর বাংলাবাজার এলাকার ডাকাত এরশাদ, জিয়াউর রহমান, মোহাম্মদ হোসেন, মো.ইলিয়াছ, মোহাম্মদ রশিদ, ডাকাত শহীদ (পিএস), মোশারফ, বাবলু, আমজাদ, নয়ন, বাদল, রাজিব ও ছাদেক নামের সন্ত্রাসীরা কোনাখালী থেকে পুরুত্যাখালীতে এসে হামলা চালায়। এসময় দিদার চেয়ারম্যান হামলায় নেতৃত্ব দেন। লায়েক উদ্দিন আরো জানান, চেয়ারম্যানের সাথে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে পার্টনারে খাল কাটা, বালি সাপ্লাই ও বেড়িবাধের জিও ব্যাগের কাজ করতে গিয়ে ১৪লাখ টাকা পাওনা রয়েছেন। সেজন্য এনসিসি ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংকের অনুকূলে ২টি চেকও দিয়েছেন। উক্ত পাওনা টাকা চাইলে ক্ষেপে গিয়ে তাদের উপরও প্রকাশ্যে হামলা চালানো হয়েছে।
আহত শিশু উম্মে হাবিবার পিতা রুবেল জানান, চকরিয়া থানায় এ বিষয়ে একটি মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, ঘটনার বিষয়ে একটি এজাহার (অভিযোগ) পেয়েছেন। বিষয়টি অধিক গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।