বিশেষ প্রতিবেদকঃ
কুতুবদিয়া থানার ওসি দিদারুল ফেরদাউসের বিচক্ষণতায় দীর্ঘ ১১ মাস পর মায়ের বুকে ফিরল ভারতে পাচার হওয়া কিশোরী আসমা বেগম।
মঙ্গলবার (১৬জুন) বিকালে তাকে বাবা-মার কাছে হস্তান্তর করে ওসি দিদারুল ফেরদাউস।
থানা সুত্রে জানা গেছে, গেল বছরের ১১ জুলাই বিদেশ থেকে কল আসে অফিসার ইনচার্জ কুতুবদিয়া থানায়। জানালেন কুতুবদিয়া থানার আসমা বেগম নামের
এক মেয়ে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের শিকার হয়। বিভিন্ন হাতবদল হয়ে সে আরো কিছু মেয়ের সাথে ট্রেনে করে গুজরাটের আহমেদাবাদ যাচ্ছে। মেয়েটিকে দেখে লোকটির সন্দেহ হলে তিনি মেয়েটির সাথে কথা বলেন। জানতে পারেন মেয়েটির বাড়ি বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায় থানায়। সে চট্টগ্রাম থেকে মানব পাচারের শিকার হয়েছে। আদালাজ থানার পুলিশ সদস্যরা আসমা সহ ৮ জন মেয়েকে উদ্ধার করে স্থানীয় Children Home For Girls, Odhav, Ahmedabad, Gujrat নামক শিশু আশ্রমে স্থানান্তর করে। বিষয়টি জেনে ওসি মেয়েটির মা-বাবার সাথে যোগাযোগ করে। চলতে থাকে দেশে ফিরে আনার প্রক্রিয়া। অবশেষে ১১ মাস পর কুতুবদিয়া থানায় ফিরে আনা হয় পাচারের শিকার আসমাকে এবং আইনী প্রক্রিয়া শেষে বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পাচারের শিকার আসমা জানায়, সে চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলীতে একটি ফিশিং কোম্পানিতে চাকরি করত। ঘটনার সাড়ে পাঁচ মাস আগে চাকরিতে যোগদানের জন্য সে কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরে চলে যায়। এরপর মা-বাবার সাথে খুব কমই কথা হতো। কিন্তু পাচার হওয়ার ১৫ দিনে আগে সর্বশেষ মা-বাবার সাথে কথা হয়। শেষ কথাটি ছিল-‘আমার আশা করো না,আমার
জন্য দোয়া করো”।
ওসি দিদারুল ফেরদাউস কক্স টিভিকে জানান, ভারতের পুলিশ থেকে কল পেয়ে পাচারের শিকার মেয়ের মা-বাবাকে থানায় হাজির করি। মা-বাবার কাছ থেকে আসমার যাবতীয় ঘটনা শুনি। শোনার পর কিছুটা আশাহত হলেও ঠিক তখনই আশার আলো দেখালেন ডাঃ হার্ষা আগারওয়াল। যিনি আহমেদাবাদের শিশু আশ্রমে সাইকোলজিস্ট এবং সাইকো থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ডাঃ আগারওয়াল মেয়েটিকে কিভাবে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো যায়, সে ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা চাইলেন। মেয়েটিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমাদের চেস্টার কমতি থাকবে না বলে আমি উনাকে আশ্বস্ত করি। এরপর আমি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ-খবর নিয়ে যোগাযোগ করলাম’ রাইটস যশোর’ নামের এক এনজিওর অন্যতম কর্ণধার বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক এর সাথে। জানালেন মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠান সাধ্যমতো সহযোগিতা করবেন।
ডাঃ হার্ষা আগারওয়াল আর বিনয় মল্লিকের মধ্যে যোগাযোগ অব্যহত রাখি। গত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখে পুলিশ সুপার, জেলা বিশেষ শাখা, কক্সবাজার এর মাধ্যমে কুতুবদিয়া থানা থেকে আসমা এবং তার পরিবার সম্পর্কে তথ্য প্রেরণ করি।
অবশেষে বাংলাদেশ ও ভারতের সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে আমাদের কস্ট সফলতার মুখ দেখল। ১২ জুন আসমা দেশে ফিরে আসে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাকে বেনাপোল বন্দর থানায় হস্তান্তর করলে সেখান থেকে ‘রাইটস যশোর’ মেয়েটিকে জিম্মায় গ্রহণ করে আমাকে জানায়। আমি মেয়ের বাবা জাহাঙ্গীর আলমকে iমেয়েকে নিয়ে আসার জন্য যশোর পাঠিয়ে দেই। আজ দুপুর ১ টার সময় জাহাঙ্গীর আলম তার মেয়ে আসমাকে নিয়ে কুতুবদিয়ায় ফিরে আসে। সকল আইনী প্রক্রিয়া শেষে তাকে বাবা-মার কাছে হস্তান্তর করি। বাবা-মাকে পেয়ে সে বেশ খুশি। তার মুখে হাঁসি ফোটাতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
এদিকে,দীর্ঘ ১১ মাস পর আসমাকে ফিরে পেয়ে মানবিক ওসি দিদারুল ফেরদাউসকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান পাচারের শিকার আসমা বেগমের মা-বাবা।